সাইফুদ্দীন আহমদ।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা রাজ্য এখন বড় অচেনা অজানা জনপদ। দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে সম্পর্কও ম্রিয়মাণ। অথচ অতীতে এই ত্রিপুরার সাথে বাংলার শাসকদের ছিল গভীর সম্পর্ক। আর এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন এখনও দু অঞ্চলের মাঝেই অল্প হলেও বিদ্যমান রয়েছে। ত্রিপুরা ও বাংলার সম্পর্কের ঐতিহাসিক মাইলফলক হলো কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত শাহ সুজা মসজিদ। ষোড়শ শতকে মোগল শাহজাদা শাহ সুজার স্মরণে ত্রিপুরার রাজা মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মোগল বাদশাহ শাহজাহানের পুত্র এবং বাদশাহ আওরঙ্গজেবের ভাই শাহ সুজা ১৬৩৯ সাল থেকে ১৬৬০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর বাংলার সুবাদার ছিলেন। এসময় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তার সাথে ত্রিপুরা রাজাদের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।
ত্রিপুরার তৎকালীন রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের সাথেও শাহ সুজার অম্ল মধুর সম্পর্ক বজায় ছিলো। তাদের এই সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়, যখন এই দুই শাসক ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আরাকানে গিয়ে উঠেন। এককালের প্রভাবশালী বাংলা এবং ত্রিপুরার এই দুই শাসক ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে রাজ্যহারা হন একইসাথে এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে উভয়ই বেঁচে নেন পাশ্ববর্তী আরাকান রাজ্যকে।
সুবাদার শাহ সুজা একদিকে তার ভাই আওরঙ্গজেব আলমগীরের সাথে সিংহাসন দখলের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আরাকানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। অপরদিকে ত্রিপুরারাজা গোবিন্দ মাণিক্য তার বৈমাত্রেয় ভাই নক্ষত্র মাণিক্যের কূটকৌশলে সিংহাসন হারিয়ে একসময় আরাকানে পৌঁছান। সিংহাসনচ্যুত এই দুই শাসকের মাঝে এইসময় খুবই ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, আরাকানে যুবরাজ শাহ সুজা নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন। অপরদিকে গোবিন্দ্য মাণিক্য একটাসময় পর আবার ত্রিপুরার সিংহাসনে আরোহন করেন। পুনরায় রাজা হবার পর রাজা গোবিন্দ্য মাণিক্য তার প্রিয় বন্ধু শাহ সুজার স্মরণে তখন কুমিল্লায় নির্মাণ করেন একটি মসজিদ।
অবশ্য কারো কারো দাবি মতে, মসজিদটি শাহ সুজার নিয়োগকৃত কোনো কর্মকর্তা দ্বারা তারই শাসনামলে তৈরি। কিন্তু শাহ সুজার শাসনামলে কুমিল্লার বেশিরভাগ অঞ্চলে মোঘল শাসনের দৃঢ় ভিত্তি না থাকায় এই দাবিটা অগ্রহণযোগ্যই মনে হয়। আর তাছাড়া ত্রিপুরা রাজবংশের বর্তমান রাজা প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্যও কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, শাহজাদা শাহ সুজার জন্যই মসজিদ নির্মাণ করেন প্রদ্যোতের পূর্ব পুরুষেরা।
ইতিহাস থেকে এবার আমরা দেখবো ত্রিপুরা কী বাংলাদেশে যোগদান করতে পারতো!
একসময় মোগল শাসনের যবনিকাপাত ঘটে। ভারত জুড়ে গড়ে উঠে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ত্রিপুরাকে পুরোপুরি দখল না করে করদ রাজ্য হিসেবে মর্যাদা দেয়।
মোগল আমলেই সমতল ত্রিপুরা তথা কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল বাংলার অধিভুক্ত হয়।"চাকলা রোশনাবাদ" নামে এর নামকরণ করে মোগলরা এখানে জমিদারি প্রথা চালু করে। ব্রিটিশ আমলেও এটি বজায় ছিলো। অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলেও কুমিল্লা এবং নোয়াখালী অঞ্চল ত্রিপুরা থেকে পৃথক ছিলো এবং বাংলার অংশ ছিলো। নবাব সুজাউদ্দৌলার মাধ্যমে বাংলার যুক্ত হওয়া কুমিল্লা আর নোয়াখালীকে আর কখনো ফিরে পাইনি ত্রিপুরা।
১৯৪৭ সালে বিভক্ত হয় ভারতবর্ষ। এই সময় দেশীয় রাজ্যগুলোর এখতিয়ার ছিলো নিজের ইচ্ছমতো ভারত বা পাকিস্তানে যোগদান করা অথবা স্বাধীন থাকার। ত্রিপুরার তৎকালীন রাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য চেয়েছিলেন ভারতে যোগদান করতে। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার অল্প কিছুকাল আগে তিনি মারা যান। এরপর কীর্তি বিক্রম মাণিক্য ক্ষমতায় বসলেও বয়স কম হওয়ায় তার মা মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবী ত্রিপুরার ক্ষমতার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেন।
ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়, ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রায় ২ বছর পর ত্রিপুরা ভারতে যোগদান করে ১৯৪৯ সালে। কিন্তু ত্রিপুরার এত দেরিতে ভারতে যোগদান করার কারণ কি? বিভিন্ন তথ্যমতে, ত্রিপুরার তৎকালীন ডি ফ্যাক্টো শাসক মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবী চেয়েছিলেন ভারতের সাথে যোগ না দিয়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ( আজকের বাংলাদেশ) সাথে যোগ দিতে।
মহারাণীর বাংলাদেশে ( তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) যোগদান করার ইচ্ছে নিয়ে অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন আলাপ আছে। ভারতের অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যু বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত কখনোই এই ব্যাপারে আলাপ তুলবে না। কিন্তু ২০১৪ সালে ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার দৃঢ়তার সাথে দাবি তোলেন যে, মহারাণী ভারতের বদলে পূর্ববঙ্গেই যোগদানে ইচ্ছুক ছিলো।
ত্রিপুরাকে দুই দশক শাসন করা বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের এমন দাবি তাই ফেলনার বিষয় নয়। মানিক সরকারের এমন দাবি সত্যি হলে এটা বলা যায় যে, তৎকালীন অদক্ষ পূর্ববঙ্গীয় শাসকগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ ত্রিপুরাকে হারিয়েছে চিরতরে।
অবশ্য মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবী চাইলেও ত্রিপুরাকে পূর্ব বঙ্গের সাথে যুক্ত করতে পারতেন কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কেননা সেসময় বিহারে দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় নোয়াখালী অঞ্চলে দাঙ্গা সৃষ্টি হলে বিরাট সংখ্যক হিন্দু জনগোষ্ঠী ত্রিপুরায় মাইগ্রেন্ট হন। স্বাভাবিকভাবেই তখন হিন্দু প্রধান রাজ্য ত্রিপুরা এবং মুসলিম প্রধান পূর্ববঙ্গের মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ গড়ে উঠে। এই বিরোধ টপকিয়ে বাংলাভাষী এই দুই অঞ্চলকে এক করার মতো যোগ্য কোনো নেতৃত্ব তখন ছিলো না। তাই চোখে দেখা দূরত্বের আগরতলা আজ হয়ে গেলো আমাদের জন্য অচিন এক জায়গা।
কাজী নজরুল ইসলাম! বাংলাদেশের জাতীয় কবি ত্রিপুরায় যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণীয়!
বাঙালি রাষ্ট্র বাংলাদেশ, বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ কিংবা আসাম কোথাও কিন্তু নজরুলের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি নেই। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্রোহী কবির জন্মদিনে সরকারি ছুটি পালন করে আসছে সুদীর্ঘ সময় ধরে।
ত্রিপুরায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণীয়। তার জন্মদিন উপলক্ষেও স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়। ত্রিপুরা রাজার সাথে রবীন্দ্রনাথের সুসম্পর্ক বজায় ছিলো। ত্রিপুরা রাজাদের আমন্ত্রণে বিশ্বকবি সর্বমোট ৭ বার ত্রিপুরা ভ্রমণে আসেন।
ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য এবং মোগল শাহজাদা শাহ সুজার বন্ধুত্ব নিয়ে আগেই আলোচনা করা হয়েছে। এই রাজা গোবিন্দ মাণিক্যকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন তার অনবদ্য "রাজর্ষি " উপন্যাসটি।
অপরদিকে কাজী নজরুল ইসলাম তার বিদ্রোহী, সাম্যবাদী মানসিকতার কারণে ত্রিপুরার সন্তান না হয়েও ত্রিপুরাবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তিত্ব।
সর্বশেষ যা বলা যায়, ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক টা হলো অনেকটা সাগরের মাঝে পথহারা ব্যক্তির কাছে থাকা বিশাল পানির মজুদের মতো। সাগরে দিক হারিয়ে অজানায় ভাসতে থাকা ব্যক্তির চারিপাশ পানি দ্বারা পূর্ণ হলেও খাওয়ার মতো এক ফোঁটা পানিও পায় না সেই মানুষটি। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হলেও ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের বর্তমানে নেই তেমন যোগাযোগ!
হামলা যেদিকে আসে মোকাবিলাও সেদিকে করতে হয়
শায়খে বাঘা রহ.’এর নামে পাকিস্তানে মসজিদ নির্মাণ করছে সিম্পল রিজন চ্যারিটি
কুইন মেরী ইউনিভার্সিটির গবেষণা ‘জেনোসাইড ইন মায়ানমার’
গ্রন্থ পর্যালোচনা: দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেন্ড
গ্রন্থ পর্যালোচনা: ইবনে খালদুনের দ্য মুকাদ্দিমা
সিম্পল রিজন চ্যারিটির উদ্যোগে সুনামগঞ্জে শীতকালীন ফুড এইড কার্যক্রম সম্পন্ন
সিলেটে সিম্পল রিজন চ্যারিটির উদ্যেগে ফ্রি সুন্নাতে খতনা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
ইস্তাম্বুলে হালাল ফুড এক্সপোতে দ্য এসোসিয়েশন অব হালাল রিটেইলারস ইউকের অংশগ্রহণ
লন্ডনে সিম্পল রিজন চ্যারিটির উদ্যোগে 'সেবার মাধ্যমে দাওয়াহ' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সিম্পল রিজনের সহযোগীতায় বগুড়ায় দাওয়াহ হালাকাহ অনুষ্ঠিত
সিলেটে নববী দাওয়াহ : পদ্ধতি ও শিক্ষা শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিম্পল রিজনের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান
লক্ষীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সিম্পল রিজন চ্যারিটির ত্রাণ বিতরণ
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম
হামলা যেদিকে আসে মোকাবিলাও সেদিকে করতে হয়
শায়খে বাঘা রহ.’এর নামে পাকিস্তানে মসজিদ নির্মাণ করছে সিম্পল রিজন চ্যারিটি
কুইন মেরী ইউনিভার্সিটির গবেষণা ‘জেনোসাইড ইন মায়ানমার’
গ্রন্থ পর্যালোচনা: দ্যা রুম হোয়ার ইট হ্যাপেন্ড
গ্রন্থ পর্যালোচনা: ইবনে খালদুনের দ্য মুকাদ্দিমা
সিম্পল রিজন চ্যারিটির উদ্যোগে সুনামগঞ্জে শীতকালীন ফুড এইড কার্যক্রম সম্পন্ন
সিলেটে সিম্পল রিজন চ্যারিটির উদ্যেগে ফ্রি সুন্নাতে খতনা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
ইস্তাম্বুলে হালাল ফুড এক্সপোতে দ্য এসোসিয়েশন অব হালাল রিটেইলারস ইউকের অংশগ্রহণ
লন্ডনে সিম্পল রিজন চ্যারিটির উদ্যোগে 'সেবার মাধ্যমে দাওয়াহ' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সিম্পল রিজনের সহযোগীতায় বগুড়ায় দাওয়াহ হালাকাহ অনুষ্ঠিত
সিলেটে নববী দাওয়াহ : পদ্ধতি ও শিক্ষা শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিম্পল রিজনের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান
লক্ষীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সিম্পল রিজন চ্যারিটির ত্রাণ বিতরণ
কুরবানি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও বিধান। মুফতি শরীফ মোহাম্মদ সাঈদ
লন্ডনে সিম্পল রিজনের অফিস পরিদর্শন করলেন মুফতি সাইফুল ইসলাম